Enjoining What Is Right And Forbiding What Is Evil

Articles Subject Information
Title: Enjoining What Is Right And Forbiding What Is Evil
Language: Bengali
The Writer: Iqbal Husain Ma’soom
Reviewing: Abu Bakar Muhammad Zakaria
Publisher: Islamic Propagation Office in Rabwah
Short Discription: Enjoining What Is Right And Forbiding What Is Evil is from the duties of this religion and fundemental pillars and the greatest factor of reform and righteousness .Through it rightness appears and wrong fades. So this article includes its definition, principles, limitations and etiquettes .
Addition Date: 2008-01-11
Short Link: http://IslamHouse.com/73357
This address categorized objectively under the following classifications
Translation of Subject Description: Bengali - Arabic - Bosnian - Uzbek - Thai - Malayalam
Attachments ( 2 )
1.
সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ
606.8 KB
Open: সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ.pdf
2.
সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ
3.9 MB
Open: সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ.docx
Detailed Description

 

সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ

المعروف এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে : المعلوم বা জ্ঞাত ও জানা বস্তু বা বিষয়। عرف يعرف معرفة وعرفانا এর অর্থ জানা। المنكر- المعروف (অজ্ঞাত ও অপরিচিত) এর বিপরীত।

المعروف শব্দটি المعرفة (জানা) এবং الاستحسان (কল্যাণকরন) উভয়কে শামিল করে।

শরিয়তের পরিভাষায় মারুফ বলা হয় :—

اسم جامع لكل ما عرف من طاعة الله والتقرب إليه بفعل الواجبات والمندوبات.

অর্থাৎ, যে সকল ফরজ ও নফল কাজের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ পায় এবং নৈকট্য সাধিত হয় তাকে মারূফ বলে।
আর মুনকার হচ্ছে মারূফের বিপরীত

وهو كل ما قبحه الشرع وحرمه وكرهه.

এমন কথা ও কাজ যাকে শরিয়ত হারাম, অপছন্দ ও ঘৃণা করে হারাম সাব্যস্ত করেছে। উপরোক্ত সংজ্ঞা দ্বয়কে সামনে রাখলে আমরা দেখতে পাব যে শরিয়তের মৌলিক ও আনুষঙ্গিক সব বিষয় যেমন আক্বিদা-বিশ্বাস, ইবাদত, আখলাক-সুলুক ও মুআমালাত-ফরয হোক বা হারাম, মোস্তাহাব কিংবা মাকরূহ-সবই উভয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর মধ্যে যা ভাল ও কল্যাণকর তা মারূফের অন্তর্ভুক্ত আর যা খারাপ ও অকল্যাণকর মুনকারের অন্তর্ভুক্ত।

আমার বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকার ওয়াজিব। এ মর্মে অনেক আয়াত ও অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তা ছাড়া এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে এটি ওয়াজিবে কেফায়া। উম্মতের যথেষ্ট পরিমাণ অংশ এ দায়িত্ব পালন করলে অন্যদের থেকে গুনাহ রহিত হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:-

وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (آل عمران:104)

আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত, যারা সৎকাজের প্রতি আহ্বান করবে, নির্দেশ করবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে। আর তারাই হল সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান:১০৪)

আয়াতে (ولتكن) শব্দটি أمر তথা নির্দেশ সূচক বাক্য। যা আবশ্যকীয়তাকে প্রমাণ করে। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:-

وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ. (التوبة:71)

আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের বন্ধু। তারা ভাল কাজের নির্দেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে। জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তাআলা দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা:৭১)

আর মুনাফেক সম্পর্কে বলেছেন :

الْمُنَافِقُونَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُمْ مِنْ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمُنْكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوفِ.(التوبة: 67)

মুনাফেক নর, মুনাফিক নারী একে অপরের অনুরূপ। অসৎকর্মের এবং সৎকর্ম নিষেধ করে। (সূরা তাওবা : ৬৭)

আল্লাহ তাআলা আমর বিল মারূফ এবং নেহি আনিল মুনকারকে (সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ) মোমিন ও মুনাফেকদের সাথে পার্থক্যকারী নিদর্শন হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন। সাহাবি আবু সাইদ খুদরী রা, থেকে বর্ণিত তিনি বলেন :

سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: من رأى منكم منكرا فليغيره بيده، فإن لم يستطع فبلسانه، فان لم يستطع فبقلبه، و ذلك أضعف الإيمان.

আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি তোমাদের কেউ অন্যায় অশ্লীল কর্ম দেখলে শক্তি দ্বারা প্রতিহত করবে। যদি সমর্থ না হও তাহলে কথার দ্বারা প্রতিবাদ করবে এতেও সমর্থ না হলে মন থেকে ঘৃণা করবে। আর এটিই হচ্ছে সবচে দুর্বল ঈমান। হাদিসে বর্ণিত فليغيره শব্দটি নির্দেশ সূচক বাক্য যা আবশ্যকীয়তার দাবিদার। ইজমা প্রসঙ্গে আল্লামা ইমাম নববী রহ. বলেন-

وقد تطابق على وجوب الأمر بالمعروف والنهي عن المنكر الكتاب والسنة والإجماع.

আমার বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকার ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে, কোরআন, সুন্নাহ, এবং ইজমা অভিন্ন মত পোষণ করেছে। বাকি থাকল ওয়াজিবে কেফায়া হওয়া। এটিও জমহুরে উম্মতের মতামতের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, আল্লামা ইবনুল আরাবী মালেকি রহ. আল্লাহর বাণী ولتكن منكم أمة প্রসঙ্গে বলেন। আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকার যে ফরযে কেফায়া তার প্রমাণ এ আয়াতের মধ্যেই বিদ্যমান।

আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের তিনটি তাৎপর্য :—

(এক) সৃষ্টির বিরুদ্ধে إقامة حجة الله على خلقه আল্লাহর হুজ্জত প্রতিষ্ঠিত করা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :—

رُسُلًا مُبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِينَ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ . النساء:165)

সুসংবাদদাতা ও ভীতিপ্রদর্শনকারী রাসূল প্রেরণ করেছি যাতে রাসূল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ আরোপ করার মত অবকাশ না থাকে। (সূরা নিসা:১৬৫)

(দুই) আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বারণকারী আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের দায়িত্ব পালনের জামানত থেকে মুক্তি পাওয়া। যেমন শনিবারের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়ের ভাল ও সৎ লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন :—

وَإِذْ قَالَتْ أُمَّةٌ مِنْهُمْ لِمَ تَعِظُونَ قَوْمًا اللَّهُ مُهْلِكُهُمْ أَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيدًا قَالُوا مَعْذِرَةً إِلَى رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ. (الأعراف:164)

তারা বলল, তোমাদের পালনকর্তার নিকট দায়িত্ব-মুক্তির জন্য এবং যাতে তারা সাবধান হয় এ জন্য। (সূরা আরাফ : ১৬৪)

(তিন) যাকে সৎ কাজের আদেশ দেয়া হয় বা অসৎ কাজ থেকে বারণ করা হয় তার উপকারের প্রত্যাশা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন:-

وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَى تَنْفَعُ الْمُؤْمِنِينَ (الذاريات:55)

আপনি উপদেশ দিতে থাকুন। কারণ উপদেশ মোমিনদের উপকারে আসবে। (যারিয়াত : ৫৫)
আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের ফজিলত :

আমর বিল মারূফ এবং নেহি আনিল মুনকার ইসলামের একটি অত্যবশ্যকীয় দায়িত্ব। একটি মৌলিক স্তম্ভ এবং এ ধর্মের অনন্য বৈশিষ্ট্য। সংস্কার ও সংশোধনের বিশাল মাধ্যম। তার মাধ্যমে সত্যের জয় হয় এবং মিথ্যা ও বাতিল পরাভূত হয়। তার মাধ্যমে শান্তি ও সমৃদ্ধির বিস্তার ঘটে। কল্যাণ ও ঈমান বিস্তৃতি লাভ করে। যিনি আন্তরিকতা ও সততার সাথে এ দায়িত্ব পালন করেন তার জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার ও মর্যাদাপূর্ণ পারিতোষিক।

কোরআনে অসংখ্য আয়াত ও প্রিয় নবীর অগণিত হাদিস এর প্রমাণ বহন করে। এর অল্প কিছু নীচে প্রদত্ত হল।

(১) আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ. (التوبة:71)

অর্থাৎ আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক-সুহৃদ। তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। সালাত প্রতিষ্ঠিত করে, জাকাত দেয়, এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ রহম ও দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী। প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা : ৭১)

আয়াতে পরিষ্কার দেখা গেল যে আল্লাহ তাআলা আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের উপর রহমতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

(২) মহান রাব্বুল আলামীন আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের দায়িত্ব পালন কারীদের প্রশংসা এবং তাদের পরিণাম ও শেষ ফল কল্যাণময় বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন :—

وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (آل عمران:104)

আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা আহ্বান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে। আর তারাই সফল কাম। (আলে ইমরান : ১০৪)

(৩) আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকার পার্থিব মুসিবত ও পারলৌকিক শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়। আল্লাহ বলেছেন :—

فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ أَنْجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُوا بِعَذَابٍ بَئِيسٍ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ .(الأعراف:165)

যে উপদেশ তাদের দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা বিস্মৃত হয়ে গেল। তখন আমি সে সব লোকদের মুক্তি দান করালাম যারা মন্দ কাজ থেকে বারণ করত। আর পাকড়াও করলাম গুনাহ্‌গার জালিমদেরকে নিকৃষ্ট আজাবের মাধ্যমে তাদের নাফরমানির ফলস্বরূপ। (সূরা আরাফ : ১৬৫)

(৪) আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকার পরিত্যাগ করা আল্লাহর লানত, গজব ও ঘৃণার কারণ এবং এ কারণেই দুনিয়া ও পরকালে কঠিন শাস্তি নেমে আসবে। আল্লাহ তাআলা বলেন : -

لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُودَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ ﴿78﴾ كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ ﴿79﴾.(المائدة:78-79)

অর্থাৎ বনী ঈসরাইলের মধ্যে যারা কাফের তাদেরকে দাউদ ও মরিয়ম তনয় ঈসার মুখে অভিসম্পাত করা হয়েছে। এ কারণে যে তারা অবাধ্যতা করত এবং সীমালঙ্ঘন করত। তারা পরস্পরকে মন্দ কাজে নিষেধ করত না যা তারা করত। তারা যা করত অবশ্যই মন্দ ছিল। (সূরা মায়েদা : ৭৮-৭৯)

মন্দ কাজে বাধা প্রদান ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলি :

প্রথমত : আদেশদান ও বাধা প্রদানকারীর সাথে সংশ্লিষ্ট শর্তাবলি :

(১) ঈমান। অমুসলিমদের উপর এ দায়িত্ব ওয়াজিব নয়।

(২) মুকাল্লাফ বা শরিয়ত কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়া। অর্থাৎ সৎকাজের আদেশ দান ও অসৎ কাজে বাধা প্রদানকারীকে বুদ্ধিমান (عاقل) ও প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। নির্বোধ ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের উপর আদেশ ও নিষেধ করা ওয়াজিব নয়।

(৩) সামর্থ্য। যিনি এ কাজে ক্ষমতা রাখেন তার উপরই ওয়াজিব। আর যার ক্ষমতা নেই, অক্ষম ও অসমর্থ তার উপর ওয়াজিব নয়। তবে তাকে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করতে ও অপছন্দ করতে হবে। করা আবশ্যক।

দ্বিতীয়ত: অসৎ কাজ (যা প্রতিহত করা হবে তার সাথে) সংশ্লিষ্ট শর্তাবলি।

(১) কাজটি মন্দ ও নিষিদ্ধ এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। ধারণা ও সম্ভাবনার উপর নির্ভর করে বাধা প্রদান বা প্রতিহত করণ জায়েজ হবে না।

(২) যে মন্দ কাজ প্রতিহত করার ইচ্ছা তাকে সম্পাদনকারী সহ প্রতিহত করার সময় কাজে লিপ্ত অবস্থায় পাওয়া যেতে হবে।

(৩) প্রতিরোধ উদ্দিষ্ট অসৎকর্মটি স্পষ্ট ও দৃশ্যমান হতে হবে। অনুমান নির্ভর হলে প্রতিহত করণ জায়েজ হবে না। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন: - ولا تجسسوا তোমরা দোষ ও গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না। (সূরা হুজুরাত : ১৩)

তাছাড়া ঘর ও এ জাতীয় (সংরক্ষিত) জিনিসের একটি স্বকীয় মর্যাদা আছে। শরয়ি কোন কার্যকারণ ব্যতীত সেটি বিনষ্ট কর বৈধ হবে না।

আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকার সম্পাদন কারীর কিছু আদব :

ইখলাস ও আন্তরিকতা। কারণ সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের বাধা প্রধান একটি অন্যতম শীর্ষ ইবাদত ; আর ইবাদত প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন:-

فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ. (الزمر:2)

অতএব আপনি নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর ইবাদত করুন।

(২) ইলম তথা প্রয়োজনীয় জ্ঞান। ইলম ব্যতীত অসৎ কাজে বাধা প্রদান করতে যাবে না। কারণ এতে শরয়ি নিষিদ্ধ কাজ সমূহে পতিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:-

قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي . يوسف 108

বলে দিন, এটাই আমার পথ আমি আল্লাহর দিকে বুঝে শুনে সজ্ঞানে আহ্বান করি-আমি এবং আমার অনুসারীরা (ইউসুফ : ১০৮)

(৩) আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের ক্ষেত্রে হক স্পষ্ট করার পাশাপাশি হিকমত ও সুকৌশল, সদুপদেশ এবং সূক্ষ্ম পন্থার সাহায্য নেয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন :—

ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ. (النجل:125)

অর্থাৎ আপনি মানুষদের আপনার প্রতিপালকের পথে হিকমত ও সদুপদেশের মাধ্যমে আহ্বান করুন। (সূরা নাহল : ১২৫)

আল্লাহ তাআলা মূসা ও হারুন আ.-কে ফেরআউনকে দাওয়াত দেয়ার কৌশল শিক্ষা দিয়ে বলেছেন :—

فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى. (طه:44)

অত:পর তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে এতে করে হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে। (ত্ব-হা:৪৪)

আমাদের নবী মুহম্মদ সা.-কে লক্ষ্য করে বলেন :—

وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ. (آل عمران:159)

আপনি যদি রূঢ় ও কঠোর হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেত। (সূরা আল ইমরান : ১৫৯)

(৪) আমর বিল মারূফ ও নেহি আমিল মুনকার-এর ক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য সর্বাপেক্ষা জরুরি বিষয় হচ্ছে : সবর ধৈর্য এবং সহনশীলতা। লোকমান আ. স্বীয় পুত্রকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন :—

يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ (لقمان:17)

হে বৎস ! সালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও। মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর, এটিই তো দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লোকমান : ১৭)

(৫) কল্যাণ ও অকল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রাখা। সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ তখনই করবে যখন অকল্যাণের চেয়ে কল্যাণের দিকটি প্রবল থাকে আর যদি অবস্থা বিপরীত হয় যে এটি করতে গেলে কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণের সম্ভাবনাই বেশি তাহলে আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকার জায়েজ হবে না। কারণ এতে অপেক্ষাকৃত ছোট মুনকার দূর করতে গিয়ে আরো বড় মুনকারে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।

(৬) মুনকার ও অসৎকাজ দূর করার ক্ষেত্রে সবচে সহজ কাজের সাথে সংগতিপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করা। সুতরাং, সংগতি পূর্ণ পন্থা ও মাধ্যম বাদ দিয়ে আরো বড় মাধ্যম গ্রহণ করা জায়েজ হবে না।

(৭) আবু সাইদ খুদরী রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের বিন্যাস অনুযায়ী ধারাবাহিকতা ও স্তর বিবেচনায় রেখে মন্দ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদানের পদক্ষেপ নেয়া।

আবু সাইদ খুদরী রা. বলেন. আমি রাসূল সা.-কে বলতে শুনেছি। তোমাদের কেউ মন্দ কাজ হতে দেখলে (শক্তি প্রয়োগ করে) প্রতিহত করবে, সম্ভব না হলে (মুখের মাধ্যমে) প্রতিবাদ করবে। এও সম্ভব না হলে (মনে মনে) ঘৃণা করবে। আর এটি হচ্ছে ঈমানের সর্ব নিম্ন স্তর। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, সহজ পন্থা ও পদ্ধতিতে কাজ সম্ভব হলে কঠোর পদ্ধতি অবলম্বনের প্রয়োজন নেই। বরং এটি ঠিকও হবে না। যেমন, যে মন্দ কাজ প্রতিবাদের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব সেখানে শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিহত করা শরিয়তের দৃষ্টিতে ঠিক নয়। এ নীতিমালা সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের উপকারিতা :

সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদানে অনেক ফায়দা ও উপকারিতা রয়েছে, তার কয়েকটি নিম্নে প্রদত্ত হল।

(১) মন্দ ও অন্যায় দেখে তা প্রতিরোধ ও প্রতিহত করার পদক্ষেপ না নেয়া শাস্তি যোগ্য অপরাধ। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী এসেছে। সুতরাং আমার বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের মাধ্যমে আল্লাহর সে শাস্তি হতে দূরে থাকা যায় ও পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

(২) আল্লাহ তাআলা কল্যাণ ও নেক কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করার উৎসাহ-বরং নির্দেশ দিয়েছেন। আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের মাধ্যমে উক্ত নির্দেশের বাস্তবায়ন হয় এবং কল্যাণ ও নেকের কাজে সহযোগিতা হয়।

(৩) সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। কারণ এর মাধ্যমে যাবতীয় অকল্যাণ ও অনিষ্ট বিদূরিত হয়। ফলে মানুষ স্বীয় দ্বীন-জান-সম্পদ ও সম্মানের ব্যাপারে নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা বোধ করে।

(৪) এর মাধ্যমে অন্যায় ও অনিষ্টের হার হ্রাস পায়। সমাজ থেকে মন্দ ও অশ্লীল কাজের প্রতিযোগিতা প্রদর্শনী বিলুপ্ত ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। যেগুলো মূলত সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি সৃষ্টি করত। ফলে সমাজ শান্তি শৃঙ্খলা, মিল-মহব্বত ও সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠে।

ওয়েব গ্রন্থনা : আবুল কালাম আযাদ আনোয়ার /সার্বিক যত্ন : আবহাছ এডুকেশনাল এন্ড রিসার্চ সোসাইটি, বাংলাদেশ।

Go to the Top