Važnost razmišljanja o ahiretu

ČLANCI ID kartica
Naslov: Važnost razmišljanja o ahiretu
Jezik: Bangalski
Autor: Muhamed Šemsulhakk
Revizija: Muhamed Šemsulhakk - Muhamed Šemsulhakk
Izvor: Pomoćni ured za islamsko misionarstvo - Rebva
Kratki opis: Članak pojašnjava cilj života te spremanje za put te opomena da je nagrada Džennet ili kazna Džehennem.
Objavljeno: 2007-07-20
Kratki link: http://IslamHouse.com/46695
Ovaj post je uvršten u sljedeću kategoriju:
Ova ID kartica je prevedena na sljedeće jezike: Bangalski - Arapski - Uzbekistanski - Tajlandski - Malajalamski - Engleski
Atačmenti ( 2 )
1.
bn_parokal_2.doc
356 KB
: bn_parokal_2.doc.doc
2.
bn_parokal_2.pdf
104.3 KB
: bn_parokal_2.pdf.pdf
Detaljni opis

 

পরকাল ভাবনা

গড়পড়তায় দশ বছর সময়ে সম্পূর্ণ শরীরেই পরিবর্তন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আপনার যে শরীর দশ বছর আগে ছিল তা আজ আর আপনার সাথে নেই, আপনার বর্তমান শরীর সম্পূর্ণ এক নতুন শরীর। বিগত দশ বছরে আপনার শরীরের যে অংশগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে সেগুলো যদি পুরোপুরিভাবে একত্রিত করা হয় তাহলে হুবহু আপনার আকৃতির আরেকটা মানুষ দাঁড় করানো সম্ভব হবে। এমনকি আপনার বয়স যদি একশ বছর হয়ে থাকে তাহলে আপনার মতো দশজন মানুষের কাঠামো দাঁড় করানো সম্ভব হবে। এ-মানুষগুলো প্রকাশ্যে আপনার মতো হবে, তবে তাতে কোনো প্রাণ থাকবে না। যার সবকিছুই থাকবে তবে আপনিই থাকবেন অনুপস্থিত। কেননা আপনি পেছনের সকল শরীর ত্যাগ করে নতুন এক শরীরকে বাহন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এভাবে আপনার শরীর ভাঙ্গা-গড়ার এক দীর্ঘ পথ মাড়িয়ে এগোতে থাকে, পরিবর্তিত হতে থাকে প্রতিনিয়ত। শুধু আপনিই থাকেন পুরাতন, অপরিবর্তিত। যে জিনিসটাকে আপনি ‘আমি’ বলছেন তা কিন্তু থেকে যাচ্ছে আগেরটাই। আপনি যদি দশ বছর আগে কোন চুক্তি করে থাকেন তাহলে দশ বছর পরও আপনি স্বীকার করেন যে এ-চুক্তি আপনিই করেছেন। অথচ আপনার অতীতের শারীরিক অস্তিত্বের কিছুই আজ অবশিষ্ট নেই। ওই হাত এখন আর আপনার সাথে নেই যা দিয়ে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। সে জিহ্বাও নেই যা ব্যবহার করে চুক্তি সম্পর্কে আলাপ করেছিলেন। তবে আপনি এখনো ‘আপনি’ই থেকে গেছেন, এবং নির্দ্বিধায় স্বীকার করে যাচ্ছেন যে দশ বছর পূর্বে যে চুক্তি আপনি করেছেন তা আপনিই করেছেন, এবং আপনি তা পূর্ণ করতে একশতভাগ প্রস্তুত। মানুষ কোনো বিশেষ শরীরের নাম নয় যা ধ্বংস হলে মানুষও ধ্বংস হয়। মানুষ এমন একটি অভ্যন্তর অস্তিত্ব বা আত্মা, যা শরীরী অস্তিত্বের বাইরেও থাকে সজীব, প্রাণবন্ত। শরীরের পরিবর্তনশীলতা এবং আত্মার অজর অবস্থা মানুষের অবিনাশী প্রকৃতির দিকেই ইঙ্গিত করছে যা কখনো ক্ষয় অথবা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না। কিছু নির্বোধ লোকের বক্তব্য হলো, নির্দিষ্ট কিছু জড়-পদার্থের একীভূত হওয়ার নামই জীবন এবং সেগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়াই মৃত্যু। এ-বক্তব্য কোনো অর্থেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। জীবন যদি কেবল কিছু পর্দাথের বিশেষ বিন্যাসে একত্রিত হওয়ার নাম হয় তাহলে ওই সময় পর্যন্ত জীবনস্পন্দন অবশিষ্ট থাকার কথা যতক্ষণ পদার্থের এ-বিন্যাস বজায় থাকে। সাথে সাথে এটাও সম্ভব হওয়া উচিত যে, কোন দক্ষ বিজ্ঞানী পদার্থের বিশেষ কিছু অংশকে একত্রিত করে জীবন সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। আমাদের জানা মতে এদু’টোর মধ্যে একটিও সম্ভব নয়।

আমাদের অজানা নয় মৃত্যুবরণকারী কেবল সেই নয় যার শরীরের বিভিন্ন অংশ কোনো দুর্ঘটনার কারণে ছিন্নভিন্ন হয়ে ছড়িয়ে যায়। বরং বিচিত্রভাবে ও সকল বয়সের মানুষেরই মৃত্যু হয়ে থাকে। এমনও হয় যে একজন সুস্থ সবল মানুষ হঠাৎ হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা গেলো। কেন এমনটি হলো? কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারও এর কারণ খুঁজে পায় না। মৃত ব্যক্তির শরীর তার পূর্বের বিন্যাসেই রয়ে গেছে, তাহলে হলোটা কী যার জন্য আমরা তাকে মৃত বলছি? অন্য কথায় বলতে গেলে, বিভিন্ন পদার্থের সুবিন্যস্ত কাঠামো পূর্বের ন্যায় এখনো আছে, নেই শুধু হৃদস্পন্দন। সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আগের বিন্যাসেই বিরাজমান কিন্তু তাতে যা নেই তাহলো জীবনীশক্তি। এ-বিষয়টি প্রমাণ করছে যে, কিছু জড়পদার্থের বিশেষ বিন্যাসে একত্রিত হয়ার নাম জীবন নয়, জীবন হলো তার বাইরের একটি জিনিস যার রয়েছে স্বতন্ত্র অস্তিত্ব । কোনো ল্যাবরেটরিতে প্রাণবিশিষ্ট মানুষ তৈরি করা সম্ভব নয়। যদিও যান্ত্রিকভাবে শরীরের অবকাঠামো তৈরি করা সম্ভব। একটি প্রাণসম্পন্ন মানুষের মধ্যে সর্বশেষ বিশ্লেষণে যে রাসায়নিক পরমাণুর ভিত রয়েছে তার মধ্যে কার্বনের ধরন ঠিক তাই যা রয়েছে কয়লার মধ্যে। হাইড্রোজেন এবং অক্রিজেন একই ধরনের যা রয়েছে পানির উৎসে। বায়ুমন্ডলের অধিকাংশ যে নাইট্রোজেন দ্বারা গঠিত তা রয়েছে মানুষের মধ্যেও। তদ্রূপভাবে অন্যান্য জিনিসও। কিন্তু একটি প্রাণসম্পন্ন মানুষ কী শুধুই কিছু পরমাণুর সমন্বয় যা অজানা এক পদ্ধতিতে এক জায়গায় একসাথে জমায়েত হয়েছে? নাকি জীবন এর বাইরের অন্য কিছু? বিজ্ঞানীরা বলেন : ‘মানুষের শরীর কি কি পদার্থ দিয়ে গঠিত এ বিষয়টি যদিও আমাদের জানা, কিন্তু ঐসব পদার্থ একত্রিত করে জীবন সৃষ্টি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অন্য কথায় বলতে গেলে একজন সপ্রাণ মানুষের শরীর কেবল নির্জীব কিছু পরমাণুর সমষ্টির নাম নয়, বরং তা হলো প্রাণ ও পরমাণু উভয়টার সমন্বয়। মৃত্যুর পর পরমাণুর অংশটা তো আমাদের সামনেই পড়ে থাকে, কিন্তু প্রাণ তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় দূরে, ধরা ছোঁয়ার বাইরে। জীবন অক্ষয় অবিনশ্বর, এ আলোচনা থেকে এ কথাটাই উঠে আসছে স্পষ্টাকারে। মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের ধারণার গুরুত্ব এ আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে। এ-বিষয়টি আমাদের চোখে আঙ্গুল রেখে বলছে যে মৃত্যুপূর্ব জীবনই কেবল জীবন নয়, বরং মৃত্যুর পরও আমাদের বেঁচে থাকতে হবে অনন্তকালের গভীরে। এ-পৃথিবী ধ্বংসশীল, তা আমাদের মেধা ও বুদ্ধি খুব সহজভাবেই মেনে নেয়। কিন্তু মানুষ এমনই এক অস্তিত্ব যার কোন ধ্বংস নেই। আমরা যখন মৃত্যুবরণ করি তখন মূলতঃ আমাদের জীবনাবসান ঘটেনা, এক ভিন্নমাত্রার জীবন-স্রোতে আবারও যাত্রা শুরু করতে অন্য কোথাও চলে যাই যেখানে নেই কোনো ক্ষয়, মৃত্যু, নাশ। মূলতঃ আমাদের এই পৃথিবীর জীবন আমাদের মূল ও অনন্তজীবনের তুলনায় অতি তুচ্ছ, নগণ্য, এমন কি হিসেবে আসার মতোই নয়।

দ্বিতীয় জগৎ

এবার আসুন ভেবে দেখা যাক দ্বিতীয়-জীবনটা কেমন হবে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন- সেখানে বেহেশত ও দোযখ রয়েছে, মৃত্যুর পর, বিচার ফয়সালা সম্পন্ন হলে মানুষমাত্রই এ-দুটির মধ্যে যেকোনো একটিতে ঢুকে যাবে। আজকের পৃথিবীতে যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগত হবে, সৎকাজ করবে সে বেহেশতের আনন্দঘন পরিবেশে জায়গা পাবে। আর যে ব্যক্তি অসৎ, খোদাদ্রোহী হবে সে নরকরে মমন্তুদ যন্ত্রণায় নিক্ষিপ্ত হবে।

একটু ব্যাখ্যা করলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। এ-পৃথিবীতে মানুষের প্রতিটি কৃত্যের দুটি দিক রয়েছে।

এক. অন্যসব ঘটনার মতোই এ-এক ঘটনা।

দুই. উক্ত ঘটনার পিছনে একটা ইচ্ছা কার্যকর থাকে।

প্রথম দিকটিকে ঘটনাগত এবং দ্বিতীয়টিকে চরিত্রগত দিক বলা যেতে পারে। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরো উজ্জ্বল হতে পারে। ধরে নিন কোন গাছের ডালে একটি পাথর আটকা পড়ে ছিল। আর ওই গাছটির নীচ দিয়ে যাওয়ার সময় বাতাসের ঝাপটায় পাথরটি আপনার মাথায় পড়ে যায়। এমতাবস্থায় আপনি অবশ্যই গাছটির বিরুদ্ধে ক্রদ্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ না করে মাথায় হাত রেখে বাড়ি চলে যান । অন্যদিকে কোনো ব্যক্তি যদি একটি পাথর নিয়ে সজ্ঞানে আপনার মাথায় আঘাত করে তার বিরুদ্ধে আপনি উৎক্ষিপ্ত না হয়ে পারেন না, এমনকী উত্তেজিত হয়ে দ্বিখন্ডিত করে দিতে পারেন ওই ব্যক্তির মাথা।

বৃক্ষ ও মানুষ এ-দুয়ের আচরণের এ-পার্থক্য কেন? আপনি কেন গাছের বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ হন না, মানুষের বিরুদ্ধে ক্ষেপে যান প্রচন্ডভাবে। এর কারণ শুধু একটিই : বৃক্ষ অনুভূতিশূন্য আর মানুষ তার বিপরীত। বৃক্ষের কাজটি নিছক ঘটনাজাত, পক্ষান্তরে মানুষেরটা ঘটনাজাত হয়ার সাথে সাথে একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যবহ।

এর মানে, মানবকৃত্যের দুটি দিক রয়েছে। এক. এর দ্বারা একটি ঘটনা সংঘটিত হয়। দুই. কাজটি বৈধ না অবৈধ, পবিত্র মানসিকতা নিয়ে করা হচ্ছে না অপবিত্র মানসিকতা নিয়ে ইত্যাদির বিবেচনা। মানবকৃত্যের প্রথম দিকটির ফলাফল এ-পৃথিবীতেই প্রকাশ পায়, পক্ষান্তরে দ্বিতীয় দিকটির ফলাফল এ-পৃথিবীতে প্রকাশ পায় না। যদি কখনো পায় তাহলে অসম্পূর্ণরূপে। যে ব্যক্তি আপনাকে পাথর মেরেছে তার কর্মের ফলাফল তো সাথে সাথেই প্রকাশ পেয়েছে : আপনার মাথায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তার কর্মের দ্বিতীয় দিকটির- অথাৎ ভুল জায়গায় শক্তি প্রয়োগের ফলাফল এ-পৃথিবীতে প্রকাশ পাওয়া জরুরি নয়। সে ব্যক্তির ইচ্ছা ছিলো আপনার মাথায় আঘাত করতে অতঃপর আপনি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। এর পাশাপাশি সে ইচ্ছা করেছিলো একটি অবৈধ কাজ করবে, কিন্তু তার এই ইচ্ছাটার ফলাফল এ-পৃথিবীতে আসেনি। মানুষের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশকেই ফলাফল বলে , আর আমরা দেখি যে, মানুষের ইচ্ছার ঘটনাগত ফলাফল হরহামেশাই সামনে আসছে। তাহলে মানুষের ইচ্ছার দ্বিতীয় দিকটির ফলাফলের প্রকাশ, অর্থাৎ চারিত্রিক ফলাফলও অবশ্যই প্রকাশ পাওয়া উচিত।

পরকাল মানবকৃত্যের এই দ্বিতীয় দিকটির পরিপূর্ণরূপে প্রকাশের জায়গা। মানবকৃত্যের একটি দিক যেমন কিছু ঘটনাপুঞ্জের সৃষ্টি করে, তদ্রূপভাবে মানবকৃত্যের অন্যদিকটিও নিশ্চয়ই কিছু ফলাফল সৃষ্টি করে; পার্থক্য শুধু এতটুকু যে প্রথম প্রকার ফলাফল এ-পৃথিবীতেই প্রকাশ পায়, পক্ষান্তরে দ্বিতীয় প্রকার ঘটনার ফলাফল আমরা দেখতে পাবো পরজগতে।

এ-পৃথিবীতে বসবাসরত প্রতিটি মানুষই তার কর্মের মাধ্যমে কোনো না কোনো ফলাফল সৃষ্টিতে ব্যস্ত রয়েছে। হোক সে কর্মব্যস্ত অথবা বেকার, সর্বাবস্থায় তার পক্ষে অথবা বিপক্ষে সৃষ্টি হচ্ছে একটি জগৎ। ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা, অভ্যস-প্রকৃতি আচার-ব্যবহার ইত্যাদির নিরিখে মানুষেরা মন্তব্য করে থাকে তার পক্ষে বা বিপক্ষে। শক্তির যথার্থ অথবা অযথার্থ প্রয়োগের ফলে তার কার্যাদি হয়তো সুচারুভাবে সম্পাদিত হয় অথবা বিগড়ে যায়। যে ধরনের বিষয়কে লক্ষ্য করে তার চেষ্টা সাধনা পরিচালিত হয় সে ধরনের বিষয়েই প্রতিষ্ঠিত হয় তার অধিকার ।

অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তিই তার চারপাশে গড়ে যাচ্ছে একটি নিজস্ব জগৎ যা তার কৃতকর্মেরই সরাসরি ফলাফল। মানুষের সৃষ্ট এ জগৎটির একাংশ পৃথিবীর আলোতে দৃশ্যমান করছে নিজেকে। পক্ষান্তরে অপর অংশটি, অর্থাৎ বৈধ-অবৈধ হয়ার দিকটিও একটা ফলাফল অবশ্যই সৃষ্টি করছে যা আড়াল করে রেখেছে নিজেকে পরজগতে প্রকাশের অপেক্ষায়। আমাদের কর্মের দ্বিতীয় অংশটি মূলত কর্মের চারিত্রিক দিক যা ভিন্ন রকমের একটা ফলাফল সৃষ্টি করে যাচ্ছে, ধর্মীয় পরিভাষায় যাকে বেহেশত ও দোযখ বলা হয়। আমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই প্রতি মুহূর্তে এ বেহেশত অথবা দোজখ নির্মাণ করে যাচ্ছে। আর যেহেতু মানুষকে এ-পৃথিবীতে পরীক্ষার উদ্দেশে রাখা হয়েছে , তাই এ-বেহেশত ও দোযখ মানুষের চোখের অন্তরালে রাখা হয়েছে। পরীক্ষার জন্য বেঁধে দেয়া সময় যখন শেষ হয়ে যাবে, এবং পূনরুত্থান দিবস চলে আসবে প্রত্যেককেই, তখন, তার নির্মিত জগতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এখানে একটি প্রশ্ন জাগে : আমাদের কর্মের যখন একটি চারিত্রিক দিক আছে, তবে তা দৃষ্টিগ্রাহ্য না হয়ে দৃষ্টির অন্তরালে থাকছে কেন। ধরা যাক আমাদের পাশেই একটি বিল্ডিং এর নির্মাণ কাজ চলছে, এ কাজের একটি ফলাফল তো এই যে নির্মিত হয়ে বিল্ডিংটি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে যা আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু এ-কাজটির অন্য আর-একটি দিক অর্থাৎ বিল্ডিংটি কি বৈধভাবে নির্মিত হচ্ছে না অবৈধভাবে. এ-দিকটির যদি কোনো ফলাফল বা পরিণতি সৃষ্টি হয়ে থাকে তবে তা কোথায়? এমন কি-ইবা পরিণতি থাকতে পারে যা ধরাছোঁয়ার বাইরে, দৃষ্টির অন্তরালে।

এ-প্রশ্নের উত্তর মানবকৃত্যের উল্লেখিত দুটি দিকের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে। কোনো কর্মের ঘটনাগত দিক প্রতিটি মানুষই দেখতে পায়। এমনকী ক্যামেরার চোখও তা ধরতে পারে। কিন্তু সে কর্মের চাত্রিক দিক দৃষ্টির আওতায় আসার মতো জিনিশ নয়, বরং এ-দিকটি কেবলই আঁচ করার, অনুভব করার। কর্মের এ-দুটি দিকের মধ্যখানে যে পার্থক্য তা অত্যন্ত স্পষ্ট করে ইঙ্গিত দিচ্ছে, উভয় প্রকার ফলাফল কীভাবে প্রকাশ পাওয়া উচিত। অর্থাৎ মানবকৃত্যের প্রথম দিকটির ফলাফল এ-পৃথিবীতেই দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়া উচিত যা আমরা স্পর্শ করে দেখতে পাবো, পক্ষান্তরে দ্বিতীয় দিকটির ফলাফল ওই জগতে প্রকাশ পাওয়া উচিত যা এখনো দৃষ্টির অন্তরালে। ঘটনা অনেকটা এ-রকম যে যেটা যেভাবে হয়া উচিত সেটা ঠিক সেভাবেই হচ্ছে । এখানে কেবল বিচার বুদ্ধির নিরেখে সম্ভাবনাময় একটি ঘটনার কথাই বলা হচ্ছে না, বরং এ-মহাবিশ্ব সম্পর্কে চিন্তাভাবনা মানুষকে এ-সিদ্ধান্তে উপনীত করছে যে এখানে প্রতিটি কর্মেরই দু’প্রকার ফলাফল রয়েছে। এখানে এমন কর্মফলও রয়েছে যা কর্ম সম্পাদনের পর তৎক্ষণাৎ দেখা যায়। আবার এমন কর্মফলও রয়েছে যা দৃষ্টির নাগালের বাইরে থাকা সত্ত্বেও অস্তিত্ববান। এ-মহাবিশ্বে এ ধরনের অদৃশ্য ফলাফলের উপস্থিতির বিষয়টি আজ দুর্বোধ্য কোনো বিষয় নয়। উদাহরণত আওয়াজের কথা ধরুন: আওয়াজ, সবাই জানে, কিছু তরঙ্গমালা যা চর্মচোখে দেখা যায় না। আমরা যখন কথা বলার জন্য জিহ্বা নাড়াই তখন আবহাওয়ায় একপ্রকার তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। আমাদের জিহ্বা নাড়ানোর ফলে এ তরঙ্গমালা আবহাওয়ার গায়ে এঁটে যায়। যখনই কেউ কথা বলে ডেউয়ের আকৃতিতে তা বাতাসে অঙ্কিত হয়ে যায় এবং তা বিরাজমান থাকে ক্ষয়রহিতভাবে।| এমনকী বিজ্ঞানীরা ধারনা করছেন আজ থেকে হাজার বছর পূর্বের কথা-শব্দ-বক্তব্য সবই বাতাসে ঢেউ-এর আকৃতিতে বিদ্যমান রয়েছে। যদি আমাদের কাছে এসব আওয়াজ ধরার কোন যন্ত্র থাকে তাহলে যেকোনো সময় অতীতের কথাসমূহ শোনার সূযোগ পাবো। আমাদের চারপাশে বাতাসের একটি আবরণ রয়েছে যাতে আমাদের প্রতিটি আওয়াজ মুখ থেকে বের হয়ার সাথে সাথে অঙ্কিত হয়ে যাচ্ছে- যদিও আমরা আওয়াজ, অথবা আওয়াজটির বাতাসে অঙ্কিত হয়ে যাওয়া, কোনোটাই দেখতে পাই না ঠিক একইরূপে পরজগতও আমাদেরকে চারপাশ থেকে ঢেকে রেখেছে এবং আমাদের নিয়ত ও ইচ্ছাসমূহকে প্রতিনিয়ত রেকর্ড করে যাচ্ছে। পরজগতের পর্দায় আমাদের কৃত্যের নকশা অঙ্কিত হচ্ছে যা মৃত্যুর পর দৃষ্টিগ্রাহ্য হবে।

গ্রামোফোন যদি চালু থাকে এবং ডিস্ক তার উপর ঘুরতে থাকে তাহলে সুঁইয়ের স্পর্শ পাওয়া মাত্রই নিশ্চুপ বস্তুটি বাজতে শুরু করে। মনে হয় যেন সে এ-অপেক্ষাতেই ছিলো যে, কেউ যখন তার উপর সুঁই রেখে দেবে অবলীলায় সে বাজতে শুরু করবে। ঠিক একইরূপে আমাদের সমস্ত কর্মের রেকর্ড রাখা হচ্ছে, যখন সময় হবে তখন বিশ্বপ্রতিপালক তা চালু করে দিবেন, নিশ্চুপ রেকর্ড চলতে শুরু করবে। অবস্থা দেখে মানুষ বলতে থাকবে-

ما لهذا الكتاب لا يغادر صغيرة ولا كبيرة إلا أحصاها. سورة الكهف : 49

এ কেমন রেকর্ড, আমার ছোট বড়ো কোনো কিছুই তো এর হিসেব থেকে বাদ পড়েনি। (সূরা কাহ্‌ফ : ৪৯)

শেষ কথা

উপরে আমি যা বললাম তা আরো একবার ভেবে দেখুন। আপনার জীবন এক অন্তহীন জীবন, মৃত্যু এ জবীনের শেষ প্রান্ত নয় বরং দ্বিতীয় পর্বের প্রারম্ভ বিন্দু। মৃত্যু আমাদের দুই পর্বের মধ্যবর্তী সীমানা। বিষয়টিকে এভাবে বুঝুন যে কৃষক জমিনে ফসল বুনে, নিয়ম মাফিক চেষ্টা সাধনায় নিজেকে ব্যস্ত রাখে, এক পর্যায়ে ফসল প্রস্তুত হয়। কৃষক তা কাটে, গোলায় তুলে, সারাবছরের খাদ্যের ব্যবস্থা করে। ফসল কাটার অর্থ ফসলের এক পর্ব শেষ হয়ে অন্য পর্বের শুরু হয়া। ইতোপূর্বে তার কাজ ছিলো ফসল বোনা ও যত্ন নেয়া এখন তার কাজ হবে ফসল গোলায় তুলা ও নিজের প্রয়োজন মিটানো। ফসল কাটার পূর্বে ছিলো চেষ্টাসাধনা ও পয়সা ব্যয়ের পালা আর ফসল কাটার পর শুরু হয় মেহনতের ফলভোগ ও তা থেকে উপকৃত হয়ার পালা। মানুষের জীবনের অবস্থাও ঠিক একই রকম। মানুষ এ-পৃথিবীতে পরজগতের ফসল বুনছে, যত্ন নিচ্ছে। আমাদের প্রত্যেকেরই পরজগতে একটি খামার রয়েছে যা হয়তো সে চাষ করছে, অথবা ফেলে রাখছে পতিত বিনা কর্ষণে। যারা কর্ষণ করছে তারা হয়তো এতে উত্তম অথবা অনুত্তম বীজ ফেলছে। বীজ ফেলে হয়তো রেখে দিচ্ছে অবহেলায় অথবা পরিচর্যা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেখানে হয়তো তিক্ত ফলের গাছ লাগাচ্ছে অথবা রূপন করছে মজাদার ফলের বৃক্ষ। জমিনকে উর্বর করতে ব্যয় করছে সমগ্রশক্তি অথবা অপ্রাসঙ্গিক ব্যস্ততায় কাটাচ্ছে সময়। এ-ফসল তৈরির সময়সীমা মৃত্যুর পূর্বমূহুর্ত পর্যন্ত। মৃত্যু পরকালের ফসল কাটার দিন। যখন এ-পৃথিবীতে আমাদের চোখ বন্ধ হয় তখন দ্বিতীয় জগতে গিয়ে তা খোলে। সেখানে যার যার খামার দৃষ্টিতে আসে। জীবনভর কর্ষিত অথবা ফেলে রাখা জমিন নজরে আসে আমাদের সবার। শুরু হয় ফসল কাটা, গোলায় তুলা ও তাত্থেকে উপকৃত হয়ার পালা। এ-সময় কেবল সে ব্যক্তিই ফসল কাটে যে ইতোপূর্বে ফসল বুনেছে এবং সে ফসলই কাটে যা সে বুনেছে। প্রত্যেক কৃষকই জানে যে তার গোলায় ঠিক ততটুকু ফসলই আসবে যতটুকু সে মেহনতমজদুরি করেছে। তদ্রূপভাবে পরকালেও মানুষ ঠিক ততটুকুই পাবে যতটুকু সে চেষ্টা সাধনা করেছে। মৃত্যু, চেষ্টা সাধনার সময় শেষ হয়ার সর্বশেষ ঘোষণা , আর পরকাল নিজের চেষ্টাসমূহের ফলাফল লাভের শেষ জায়গা। মৃত্যুর পর দ্বিতীয়বার চেষ্টা-সাধনার না কোনো সুযোগ রয়েছে, না রয়েছে পরকালীন জীবন শেষ হয়ার কোনো সম্ভাবনা। কতইনা কঠিন এ-বাস্তবতা। যদি মানুষ মৃত্যুর পূর্বে এব্যাপারে সজাগ হতো! কারণ , মৃত্যুর পরে এব্যাপারটি বুঝে আসলে তখন আর কিছুই করার থাকবে না। মৃত্যুর পর সতর্ক হয়ার অর্থ তো শুধু এই যে, মানুষ কেবল এই বলে আফসোস করে করে সময় কাটাবে যে, সে অতীতে কত বড় ভুলই-না করেছে। এমন এক ভুল যা শুধরানোর সামন্যতম সুযোগ তার সামনে নেই। মানুষ তার পরিণাম সম্পর্কে গাফেল। পক্ষান্তরে কালস্রোত তাকে অতি দ্রুত ওই সময়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে যখন ফসল কাটার লগ্ন চলে আসবে। মানুষ এ-পৃথিবীর তুচ্ছ ফায়দাসমূহ অর্জনের জন্য ব্যস্ত রয়েছে এবং মনে করছে, সে কাজ করছে প্রচুর। পক্ষান্তরে সে কেবল তার মূল্যবান সময়ই নষ্ট করে যাচ্ছে। মানুষের সামনে বিরাট সুযোগ রয়েছে যা ব্যবহার করে সে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে পারে। কিন্তু মানুষ কাঁদামাটি নিয়ে খেলছে। তার প্রভু তাকে বেহেশতের দিকে ডাকছেন যা কল্পনাতীত নেয়ামত সামগ্রীতে ভরপুর , কিন্তু মানুষ কয়দিনের মিথ্যা আয়েশে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে আছে। মানুষ মনে করছে যে সে লাভ করছে, কিন্তু মূলত সে কেবলই হারাচ্ছে। দুনিয়াতে বাড়ি বানিয়ে সে মনে করছে সে জীবন গড়ছে কিন্তু আসলে সে বালির দেয়াল দাঁড় করাচ্ছে যা কেবল কিছুক্ষণ পর ধ্বসে পড়ার জন্যই দাঁড়াচ্ছে। হে মানুষ ! তুমি নিজেকে জানো, নিজেকে আবিষ্কার করো। গভীর মনোনিবেশের সাথে খুঁটিয়ে দেখ তুমি কি করছ, তোমার কী করা উচিত। মানুষকে সফলকাম হয়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে কিন্তু মানুষ অসতর্ক হয়ে নিজের ব্যর্থতা নিজেই ডেকে আনছে।

ওয়েব গ্রন্থনা : আবুল কালাম আযাদ আনোয়ার /সার্বিক যত্ন : আবহাছ এডুকেশনাল এন্ড রিসার্চ সোসাইটি, বাংলাদেশ।

Više... ( 1 )
Go to the Top