The Legislation Guarding The Five Necessities
The five necessities are tackled in brief in this article which demonstrates that societies which don’t care about them their end will be destruction.
পাঁচটি মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ
পাঁচটি অতি জরুরি বস্তুর সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে সকল শরিয়ত একমত। সব শরিয়তই এ বিষয়গুলোর প্রতি খুব যত্ন নিয়েছে। ইমাম শাতবী রহ. বলেন : সকল উম্মত বরং সকল জাতি ও ধর্ম এ বিষয়ে একমত যে, শরিয়তের প্রবর্তনই হয়েছে অতি প্রয়োজনীয় পাঁচটি বস্তুর সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। বস্তু গুলো হচ্ছে :—
1- الدين 2- النفس 3- النسل 4- المال 5- العقل
১- দ্বীন
২- জীবন ও প্রাণ
৩- বংশধর
৪- সম্পদ
৫- এবং বোধ-বুদ্ধি।
যারা আল্লাহর কিতাব কোরআনুল কারীম গবেষণা ও অধ্যয়ন করেন তারা অবশ্যই দেখতে পাবেন যে আল্লাহ তাআলা অনেক স্থানে বহুবার তিনটি মারাত্মক কবীরা গুনাহকে এক সাথে মিলিয়ে বর্ণনা করেছেন। সেগুলো হচ্ছে-শিরক, হত্যা, এবং যিনা-ব্যভিচার। কারণ এ তিনটি বস্তুই কদর্যতা, জাতি-বিনাশ এবং প্রজন্ম-ধ্বংস করার দিক থেকে এক ও অভিন্ন। এগুলোর মাধ্যমেই সুস্থ প্রকৃতি, সচ্চরিত্র ও মূল্যবান প্রাণের অপমৃত্যু ঘটে। যে সমাজে এসব মারাত্মক অপরাধের বিস্তার ঘটে সে সমাজ মূলত ধ্বংস ও বিনাশের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। কারণ সে সমাজ মৌলিক সামাজিক অবকাঠামোই হারিয়ে ফেলে। এ কারণে অতীতের অনেক সভ্যতা বিলুপ্ত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে, পরবতীতে আর কখনো অস্তিত্বে আসতে পারেনি। এত দ্রুত পতন ও বিধ্বস্ত হওয়ার কার্যকারণ অনুসন্ধান ও উদ্ঘাটন করলে দেখা যায় ঐ জরুরি বিষয়গুলোর সংরক্ষণ ও যত্ন নেয়ার ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শন ও অবহেলাই একমাত্র কারণ। সুতরাং শরিয়তের ভিত্তি এ জরুরি বস্তুগুলোর উপর অহেতুক হয়নি বরং এটিই তাৎপর্যপূর্ণ এবং কল্যাণময়।
সম্মানিত পাঠক ! আমরা এখানে প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি। গুরুত্বের বিবেচনায় এবং শরিয়তের বিন্যাসের আলোকে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে।
প্রথমত: দ্বীনের সংরক্ষণ :
দ্বীনের কল্যাণ ও উপকার, সকল কল্যাণ ও উপকারের ঊর্ধ্বে, দুনিয়া ও আখেরাতের সকল বিষয় সঠিক ও কল্যাণকর হওয়া নির্ভর করে দ্বীনের উপর। দ্বীন ব্যতীত বান্দার কোন বিষয়ই সঠিক ও নির্ভুল হতে পারে না। ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি যে, দ্বীনের সংরক্ষণ অতীব জরুরি-এমর্মে সকল বিষয়ই হচ্ছে দ্বীন। আর কোরআন ও সুন্নাহ দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরার জন্য আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে আদেশ প্রাপ্ত হয়েছি। আল্লাহর এ আদেশ বাস্তবায়ন করার জন্য দুটি কাজ করা জরুরি। ঐ দুই কাজ ব্যতীত উক্ত আদেশ (কোরআন ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা) পালন হয়েছে বলে প্রমাণ করা যাবে না। কাজ দুটোর একটি হচ্ছে الفعل বা করা। দ্বিতীয়টি الترك বা পরিহার ও বর্জন করা। الفعل বা করা এর মর্মার্থ হচ্ছে দ্বীনের আরকান কায়েম করা ও ভিত্তি গুলো প্রতিষ্ঠিত করা। এটি আমলের মাধ্যমেও হতে পারে আবার হুকুমের মাধ্যমেও, দাওয়াতের মাধ্যমেও হতে পারে, আবার জিহাদের মাধ্যমেও। মোটকথা আল্লাহ তাআলার নির্দেশ গুলো যে কোন ভাবে বাস্তবায়ন করা।
আর الترك দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, ক্ষতিকর ও অনৈতিক কার্যাদি পরিহার করা। এবং যে সকল কাজের মাধ্যমে দ্বীনের ভিতর ঘাটতি ও ত্রুটি সৃষ্টি হয় যেমন বেদআত ও এ জাতীয় গুনাহ বা দ্বীন বিলকুল বিনষ্ট হয়ে যায় যেমন স্বধর্ম ত্যাগ করা বা মুরতাদ হয়ে যাওয়া-ইত্যাদি কাজ থেকে বিরত থাকা। মহান আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুকম্পা ও রহমত যে, তিনি দ্বীন সংরক্ষণের উপায় হিসাবে অনেকগুলো পন্থার অনুমোদন এবং অনেকগুলো আইনের প্রবর্তন করেছেন। এখানে অল্প কয়েকটির আলোচনা করা হল।
(১) ইবাদত ও নেক কাজ অপরিহার্য ভাবে করা এবং গুনাহ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান। আল্লাহ তাআলা বলেন -
وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴿153﴾ (الأنعام:153)
এবং নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তাহলে সে সব পথ তোমাদেরকে তার পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা সংযত হও। (সূরা আনআম:১৫৩)
(২) দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয় আবিষ্কার বেদআতের প্রচলন করার বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং বেদআতপন্থী, জাদুকর ও এ জাতীয় ভণ্ড পাপীদের শাস্তি প্রদানের ঘোষণা প্রদান।
(৩) ধর্মত্যাগী মুরতাদদের হত্যার বিধান।
(৪) জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের হুকুম।
দ্বিতীয়ত : জীবনের হেফাজত
জীবন ও প্রাণের হেফাজত একটি অতীব জরুরি ও মৌলিক বিষয়। আল্লাহ তাআলা মানুষের উপর বিভিন্নভাবে অনুগ্রহ করেছেন। তাদেরকে অস্তিত্বহীনতা থেকে অস্তিত্বে এনেছেন। পরিপূর্ণ অবয়ব ও সুন্দর কাঠামোতে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া আদায়কল্পে অবশ্যই জীবনের নিরাপত্তা ও হেফাজতের যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এবং যে সকল জিনিস জীবনকে পরিপূর্ণ রূপে বা আংশিকভাবে ধ্বংস করে বা বিপন্ন করে তা থেকেও নিজেকে রক্ষা করতে হবে। এ কারণেই নিজেকে হত্যা করতে পারবে না এবং হত্যার কারণও হতে পারবে না। সাথে সাথে অপরের ক্ষতি করা যাবে না যার ফলে নিজের জীবন দিতে হয়। হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। এসব বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا. (النساء:29)
তোমরা নিজেদের হত্যা কর না নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি দয়াবান। (সূরা নিসা : ২৯) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :
وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا ﴿93﴾.(النساء:93)
যে ব্যক্তি স্বেচ্ছা ক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম। তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাআলা তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন। তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। (সূরা নিসা : ৯৩)
কাউকে হত্যা করা হাদিসে বর্ণিত ধ্বংসাত্মক সাত কাজের একটি। নবী সা. হত্যার ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন :
لايزال المؤمن في فسحة من دينه ما لم يصب دما حراما.
মোমিন সব সময় তার দ্বীনের ব্যাপারে নিরাপদে থাকবে যতক্ষণ না সে অবৈধ ভাবে প্রাণ সংহার না করে।
তৃতীয়ত : বংশধরের হেফাজত
সন্তান ও বংশধরের হেফাজত জীবনের মৌলিক অতীব প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর অন্যতম। এটি ধরাপৃষ্ঠ আবাদের অন্যতম প্রধান সহায়ক। উম্মতের শক্তি ও বল এর মধ্যেই নিহিত। এ জন্যই ইসলাম দু ভাবে বংশধর হেফাজতের গুরুত্ব দিয়েছে।
(১) ইতিবাচক দিক : আর সেটি বংশধরের ধারা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চলমান রাখা ও বংশ বিস্তারের পরিধি বিস্তৃত ও বৃদ্ধি করার উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে। যেমন বিবাহের নির্দেশ দান, বিভিন্ন ভাবে এর প্রতি উৎসাহিত করা।
(২) নেতিবাচক দিক: আর তা যিনা ব্যভিচার হারাম করে। তার উপর কঠোর শাস্তি প্রদান এবং দৃষ্টি, সহ অবস্থান, অবাধ মেলামেশা জাতীয় যিনার প্রতি আকৃষ্ট কারী উপায় উপকরণ হারাম ও নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ ﴿30﴾ وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ ﴿31﴾.30-31)
হে নবী আপনি মোমিনদেরকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে, নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন ঢেকে রাখে যা সাধারণত: প্রকাশমান, তাছাড়া নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন স্বীয় মাথার উড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে। (সূরা নূর:৩০-৩১)
প্রজ্ঞাময় মহান রব্বুল আলামীনের বিশেষ একটি প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা হচ্ছে, তিনি নারী পুরুষ উভয়ের মাঝে এমন এক প্রকৃতি ও মেজাজ স্থাপন করেছেন যার মাধ্যমে সাময়িকভাবে মানব ধারার অস্তিত্ব ও স্থায়িত্ব চলমান থাকবে। এবং সাথে সাথে তাকে কিছু নিয়মনীতি দ্বারা শর্তাধীন করেছেন যা মানুষকে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করতে বাধা প্রদান করে এবং অবাধ্যতার লাগাম টেনে ধরে। যেমন সমকামিতা বা নিজের যিনার অপবাদ দিয়ে মানুষের সম্মান বিনষ্টে প্রবৃত্ত হওয়াকে হারাম করেছেন। এবং প্রজ্ঞাময় বিধান প্রতিকারের জন্য প্রথমেই ভয়ানক শাস্তির রাস্তা গ্রহণ করেননি। বরং এর পূর্বেও নিষিদ্ধ ও হারাম কর্মে পতিত হওয়া থেকে প্রতিহত কারী কিছু বিশেষ ও শক্তিশালী নিয়ম-নীতি প্রবর্তন করেছেন যার মাধ্যমে উক্ত শাস্তি যোগ্য অপরাধে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকতে পারবে। সুতরাং বিধান দিয়েছেন এবং সাথে সাথে আদব ও শিষ্টচারের প্রতিও পথ প্রদর্শন করেছেন। যেমন দৃষ্টি অবনত করে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। অপরিচিত নারী পুরুষ নির্জনে একত্রিত হওয়াকে হারাম করেছেন। নারী পুরুষের সহ অবস্থান ও মেলা মেশা, নারীদের খোলামেলা বের হওয়া এবং মুহরিম ব্যতীত সফর করা-ইত্যাদিকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন।
চতুর্থত: বিবেক ও বোধবুদ্ধির হেফাজত
বোধবুদ্ধি ও বিবেক আল্লাহ তাআলার বিশেষ দান ও বিশাল অনুগ্রহ। আল্লাহ তাআলা এ নেয়ামত শুধু মানুষকে দান করে অন্যান্য জীব জন্তু থেকে তাকে স্বতন্ত্র ও সম্মানিত করেছেন। মানুষ যখন বোধশক্তি হারিয়ে ফেলে তখন সে চতুষ্পদ জন্তুর মত হয়ে যায়। বিবেকের যত্ন নেয়া, হেফাজত করা এবং তাকে সুস্থ ও সচল রাখার আগ্রহ ও বাসনা প্রত্যেক মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য, তার প্রকৃতিতেই এ ধারা গেড়ে দেয়া হয়েছে এবং সকল ধী সম্পন্ন মানব সন্তান সব সময় এ চর্চা করে আসছে। সকল শরিয়ত বিবেকের হেফাজত ও তার প্রতি যথাযথ যত্ন নেয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে, মানুষকে শরিয়তের মুকাল্লাফ তথা দায়িত্বশীল বানানোর ক্ষেত্রে বিবেকই হচ্ছে মূল কেন্দ্র-বিন্দু। সে বিবেকের মাধ্যমেই উপকারী ও অপকারীর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। তাইতো বিবেকহীন ব্যক্তিকে শরিয়তের দায়িত্বশীল বানানো হয় না। এজন্যই আল্লাহ তাআলা যে সকল দ্রব্য বিবেককে ধ্বংস অথবা ত্রুটি যুক্ত করে দেয় তাকেও হারাম করেছেন।
বিবেক বিনষ্ট কারী জিনিস প্রথমত দুই প্রকার :
(১) حسي যা দেখা যায় ও অনুভব করা যায়। যেমন মাদক ও মাদকদ্রব্য। এগুলোই হচ্ছে সকল অনিষ্টের মূল চাবি-কাঠি। এগুলোর কারণে কত বিবেক নষ্ট হচ্ছে, কত অকল্যাণ সাধিত হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। মদের জঘন্য অপকারিতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করেছেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿90﴾ إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ ﴿91﴾ (المائدة:90-91)
শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব তোমরা এখনও কি নিবৃত হবে না ? (সূরা মায়েদা : ৯১)
(২) معنوي আত্মিক, যা বাহ্যত দেখা যায় না। তবে বিবেক বিনষ্ট করে। যেমন : মহান আল্লাহ তাআলার কুদরত ও ক্ষমতা অসীম তার জ্ঞান ও ক্ষমতার কোন সীমারেখা নেই। এরূপ অনেক বিষয় আছে যা আল্লাহর সাথে নির্দিষ্ট। মানুষ চিন্তা করে সেগুলো করতে পারে না। এবং তাতে মানুষের কোন ফায়দাও নেই। এরূপ বিষয়ে যদি মানুষ চিন্তা ও কল্পনা শুরু করে দেয় যে গুলোর সমাধান খুঁজে পাওয়া মূলত তার ক্ষমতার বাইরে তাহলে আস্তে আস্তে তার বিবেক লোপ পেতে থাকে এবং বোধ ও অনুভূতি নষ্ট হতে শুরু করে। সুতরাং এরূপ অসার চিন্তা ভাবনার মাধ্যমেও মানুষের বিবেক নষ্ট হয়। সুতরাং বিবেক নষ্ট হওয়ার কারণ দুইটি। মদ ও মাদক দ্রব্যে আক্রান্ত হওয়া। অহেতুক ও ক্ষমতার বাইরের বিষয় নিয়ে চিন্তা গবেষণায় প্রবৃত্ত হওয়া। অতএব বিবেকের সংরক্ষণের জন্য এ উভয়প্রকার বিধ্বংসী কার্যকারণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
পঞ্চমত : মাল সম্পদের হেফাজত :—
সম্পদ মানব জীবনের এমন একটি প্রয়োজনীয় জিনিস যা ব্যতীত মানুষ জীবনের সার্থকতা খুঁজে পায় না, চলার গতি ঠিক থাকে না। বরং সম্পদ ব্যতীত মানুষ বাঁচতেই পারে না। সম্পদ জীবনের নার্ভ ও শিরা। আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُمُ الَّتِي جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ قِيَامًا وَارْزُقُوهُمْ فِيهَا (النساء:5)
আর যে সম্পদকে আল্লাহ তোমাদের জীবন যাত্রার অবলম্বন করেছেন তা অর্বাচীনদের হাতে তুলে দিয়ো না। বরং তা থেকে তাদেরকে খাওয়াও। (সূরা নিসা : ৫)
ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সব ক্ষেত্রেই সম্পদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। মাল ও সম্পদ বলতে এখানে প্রত্যেক ঐ জিনিসকেই বুঝানো হয়েছে যার দ্বারা মানুষ নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করে, জমা করে, সঞ্চয় করে এবং ভোগ করে, এটি দ্রব্য সামগ্রীও হতে পারে আবার অর্থ কড়ি ও হতে পারে এ জাতীয় অন্য কিছুও হতে পারে। শরিয়ত সম্পদকে দুই ভাবে সংরক্ষণ করেছে:
(১) ইতিবাচক পদ্ধতিতে : আর সেটি সম্পদ উপার্জন অনুমোদিত পন্থায় খরচ করার উৎসাহ দেয়ার মাধ্যমে।
(২) নেতিবাচক পদ্ধতিতে : আর সেটি সম্পদ উপার্জন ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন ও বাড়া বাড়িকে হারাম, এ পন্থা রোধ এবং চোর বাটপার দুর্নীতি বাজদের শাস্তি ও দণ্ডবিধান প্রবর্তনের মাধ্যমে।
শরীয়তে ইসলামিয়া অপরাধের বিপরীতে দণ্ডবিধান করার ক্ষেত্রে একটি মাপকাঠি ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা রেখেছে যে, যে অপরাধের শাস্তি যতটুকু হলে অপরাধ বন্ধ হবে এবং অপরাধের মাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে ঠিক ততটুকু শাস্তিরই বিধান করা হয়েছে একটুও বাড়াবাড়ি করা হয়নি। আর হবেই না বা কেন ? এ যে প্রজ্ঞাময় বিচক্ষণ, সর্বজ্ঞ আল্লাহ তাআলার প্রবর্তন।
ভাষাগত সম্পাদনা : কাউসার বিন খালেদ /ওয়েব গ্রন্থনা : আবুল কালাম আযাদ আনোয়ার